নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়ায় পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে হুন্ডি ব্যবসা এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও ফাকিঁ দিয়ে চকরিয়া সদরের ডজন খানেক ট্রাভেল এজেন্সী ও অর্ধশতাধিক কাপড়ের দোকানে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে বিনা বাধায়। সরকারের কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করে পুরো উপজেলায় অর্ধশত হুন্ডি ব্যবসায়ী চকরিয়াকে হুন্ডির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোকে ঝামেলা মনে করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ফলে সরকার হারাচ্ছে প্রচুর পরিমানে রেমিটেন্স।
চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় এক লাখ মানুষ সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চাকুরীসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্টানে কর্মরত থেকে প্রবাস জীবনযাপন করছে। পবিত্র রমজানের ঈদকে সামনে রেখে চলতি মাসে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে পরিবার পরিজনের কাছে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করছে। এতে করে সরকারও হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভা সদরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিপনি বিতান গুলোতে বিভিন্ন কাপড়ের দোকান, মুদির দোকান, কসমেটিক্স’র দোকান, ফোন ফ্যাক্সের দোকানের আড়ালে এসব হুন্ডি ব্যবসা চলছে। এদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লোক সরকারী ও তফশিলি কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলেও অধিকাংশ প্রবাসীরা এসব হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে থাকে।
জানা যায়, চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্সের এম আর বিশ্ব সংযোগ, থ্রি ষ্টার ট্রাভেলস, সবুজ বাংলা ট্রাভেলস, আজিজিয়া ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সর রহমান ক্লথ স্টোর, রুপসি ক্লথ ষ্টোর, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, মক্কী হজ্ব কাফেলা, ওয়েষ্টার্ন প্লাজার রিদয় ফ্যাশন, লোহাগাড়ার মোস্তাক আহমদ, আল্ আকসা মার্কেটের মেৌলভী মোজাম্মেল, রুপালী শপিং কমপ্লেক্সের চকোরী ডিজিটাল ষ্টুডিও মালিক রণ ধর, মাষ্টার গিয়াস উদ্দিনসহ তার ৩ ভাই, আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের জমির হোসেন, হালকাকারার জনতা মার্কেট পাড়ার বাসিন্দা ও পৌরসভার কর্মচারী রিদুয়ানুল হক, কৈয়ারবিল ইউপির চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল ও তার পিতাসহ, পৌর সদরের সুতার দোকানের জাহাঙ্গীর আলম-পিতা আনোয়ার হোসেন ৫নং ওয়ার্ড ঘুনিয়া ফাসিয়াখারী, ফাঁসিয়াখালীর জয়নাল ফকির, মগবাজারের রফিকুল ইসলাম ওরফে সবজি রফিক, কৈয়ারবিলের ছোয়ালিয়া পাড়ার মহিউদ্দিনের চাউলের দোকান, খিলছাদকের ফরহাদ, সাহারবিলের নুরুল আবচার, হাজিয়ানের আবুল কালাম, ছিকলঘাটার দক্ষিন লক্ষারচর মটরপার্ট্স ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম, পূর্ব বড়ভেওলার বুড়ি পাড়ার হারুণ, হালকাকারার মৌলভি আনোয়ার, থানা রাস্তার মাথার নাঈম মটরস, সওদাগরঘোনার ওসমান, বুড়িপুকুর মাছঘাটার বাবু সওদাগর, হালকাকারা জসিম মাষ্টারের ছেলে রুমেল, চিরিঙ্গা ১নং ওয়ার্ডের আবদুল হাফেজ, পূর্ববড়ভেওলার মৌলভি জয়নাল, বিএনপি অফিসের পার্শ্বে জাহাঙ্গীর ষ্টোর সুতার দোকান, নিউমার্কেটের সম্্রাট ষ্টোর সহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্টানে এসব হুন্ডি ব্যবসা চলছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজনকে ফাকি দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ওইসব হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। এসকল ব্যবসায়ীরা হুন্ডির টাকা বিতরনে অভিনব কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে বিভিন্ন মুদির দোকান, ফোন ফ্যাক্সের দোকান, পানের দোকান, কাপড়ের দোকান, কসমেটিক্স এর দোকান, মটর পার্ট্সরে দোকান, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ও বাড়ীর গৃহবধুদেরকে। হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে চকরিয়া সদরের প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হলেও সরকারের কোষাগারে এক কানাকড়িও রাজস্ব জমা পড়ছেনা। এ ধরণের হুন্ডি ব্যবসা চলতে থাকলে সরকার হারাবে বিপুল পরিমান রাজস্ব আর প্রতারিত হচ্ছে প্রবাসী পরিবারের লোকজন। সচেতন চকরিয়াবাসী এসব অসাধু হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে প্রশাসনের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: